রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক আয়োজনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে অনুষ্ঠিত এই আনুষ্ঠানিকতায় রাজনৈতিক নেতারা একে নতুন রাজনৈতিক ঐক্যের মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর শেষে সনদটি সবার উদ্দেশে প্রদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এই সনদ জাতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার নতুন সূচনা।”
বিএনপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তবে ‘সনদের আইনি ভিত্তি নেই’ উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত জানায়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, “ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সামান্য বিলম্ব হতে পারে, তবে অতিথিরা পৌঁছে গেছেন। আমরা জাতির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।”
এর আগে দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করে। ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একদল ব্যক্তি পুলিশের বাধা অতিক্রম করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেন। পরে সংসদ ভবন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা সংসদের ১২ নম্বর গেটের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা গেট টপকে মঞ্চ এলাকায় প্রবেশ করে অতিথিদের আসনে বসে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
সংঘর্ষের পরও বিকেলে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।








