দীর্ঘতম সৈকতের শেষ প্রান্তেও ভিড় জমালেন পর্যটকেরা

নিরিবিলি নির্জন সৈকত। তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। সৈকতের বালুতটে আছড়ে পড়ছে নীল ঢেউ। অপরূপ এই সৈকত কক্সবাজারের টেকনাফে। পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতের শেষ প্রান্তে এর অবস্থান। ভিড়ে গিজগিজ করা কক্সবাজারের সুগন্ধা আর কলাতলী সৈকতে না গিয়ে অনেক পর্যটক এবার ছুটে এসেছেন টেকনাফের এই সৈকতে।

কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা, কলাতলী ও লাবণী পয়েন্টের ৫ কিলোমিটারে এখন পর্যটকদের ভিড়ে পা ফেলার জো নেই। আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত ঈদের ছুটির ৫ দিনে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন অন্তত ৮ লাখ পর্যটক। শহরের ৫ শতাধিক হোটেল–মোটেল–রিসোর্ট–কটেজের কোনো কক্ষ এখন খালি নেই। হোটেলগুলোর দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দুজন থাকার একটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঁচ-সাতজনও থাকছেন। এমন পরিস্থিতিতে বহু পর্যটক দূরের নিরিবিলি ও নির্জন এলাকা বেছে নিচ্ছেন।

অনেক পর্যটক ছুটছেন দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফের দিকে। ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের শেষ প্রান্ত টেকনাফ সৈকত যেন রূপের বাহার নিয়ে সেজেছে।

আজ দুপুর ১২টায় টেকনাফ সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে প্রায় হাজারখানেক পর্যটক। পাশাপাশি টেকনাফের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় পুলিশ ও হোটেল-রেস্তোরাঁমালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, আজ টেকনাফ সৈকতে এসেছেন প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক। আগের দিন শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ৬০ হাজারের বেশি। সমুদ্রসৈকতে গোসল সেরে পর্যটকেরা ছুটছেন টেকনাফ থানার অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ দেখতে।

মাথিনের কূপ দেখে অনেকে নাফ নদীর তীরে নেটং (দেবতা) পাহাড়ে গেছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এবং নাফ নদীর বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ ‘জালিয়ার দিয়া’ দেখা যায়। জালিয়ার দিয়ার পাশে টেকনাফ স্থলবন্দর। তার কিছুটা উত্তরে বন বিভাগের নেচার পার্ক এবং চার শ বছরের পুরোনো হোয়াইক্যং পাহাড়ের প্রাকৃতিক কুদুমগুহা।

মেরিন ড্রাইভের সর্বশেষ প্রান্তে তৈরি হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। পার্কের পূর্ব পাশে সাবরাং ইউনিয়ন, পশ্চিম পাশে সমুদ্রসৈকত। পার্কের ঘড়ি ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা ছবি তুলেছেন। দেখেছেন সাগরের নীল ঢেউ।

ভাস্কর্যের সামনে কথা হয় ঢাকার মালিবাগের নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আছেন মা–বাবাসহ পরিবারের ৬ সদস্য। গত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে তাঁরা কক্সবাজার শহরে পৌঁছান। নজরুল (৩৪) বলেন, গতকাল শুক্রবার বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখে সবাই হতবাক হয়েছেন। এত কোলাহল পছন্দ নয় তাঁদের। তাই নিরিবিলি পরিবেশ খুঁজতে মাইক্রো নিয়ে আজ সকালে মেরিন ড্রাইভে এসেছেন। সেখান থেকে টেকনাফ সৈকতে।

তাঁর বোন কামরুন্নেছা (২২) বলেন, মেরিন ড্রাইভের এক পাশে পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্রসৈকত। এত সুন্দর সড়ক দেশের অন্য কোথাও আছে কি না জানা নেই। মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ অংশ আরও সুন্দর। এখানে শত শত রঙিন নৌকা পড়ে আছে। সমুদ্রের পানিও বেশ স্বচ্ছ। মেরিন ড্রাইভের পাশে শিশুপার্ক। সেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকেরাও শিশুদের নিয়ে আনন্দে মেতেছে।

পার্কের দক্ষিণ পাশে দুটি রেস্তোরাঁ। সেখানে ঘরোয়া পরিবেশে মিলছে মাছ, মাংস, সবজি আর ভর্তা। দামটাও হাতের নাগালে। মেরিন ড্রাইভের উন্মুক্ত পরিবেশেও চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ফুচকা, চটপটি, ছোলা, সেদ্ধ ডিম, নুডলস, চা, কফি বিক্রি করছে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান। সেখানেও ভিড় করছিলেন পর্যটকেরা।

টেকনাফ সৈকতের দৃষ্টিনন্দন রঙিন নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে ছবি তুলেছেন, কেউ কেউ ভিডিও চিত্র ধারণ করেছেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে টেকনাফ সৈকত ঘুরতে এসেছিলেন স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদুল হক (৪৭)। তিনি বলেন, মেরিন ড্রাইভে দেখার অনেক কিছু আছে। টেকনাফ সৈকত অনেক সুন্দর।

টেকনাফের সাতটি হোটেলের কোনোটিতেই কক্ষ খালি নেই বলে জানালেন হোটেলমালিকেরা। এসব হোটেলে দৈনিক ৭ শতাধিক মানুষের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে। হোটেল দ্বীপ প্লাজার একজন কর্মচারী বলেন, বেশির ভাগ পর্যটক কক্সবাজার থেকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে টেকনাফ পৌঁছান। দর্শনীয় স্থান ঘুরে বিকেল পাঁচটার দিকে টেকনাফ ত্যাগ করেন।

হোটেলমালিকেরা জানান, ঈদের ছুটির গত ৫ দিনে অন্তত দেড় লাখ পর্যটক টেকনাফ সৈকত ভ্রমণ করেছেন। ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত পর্যটকের সমাগম লেগে থাকবে। রঙিন নৌকা আর নিরিবিলি সৈকত এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

AzadNews24.com is a trusted online news portal in Bangladesh, dedicated to delivering the latest news and special updates to its valued readers. Covering a wide range of topics including politics, economy, education, entertainment, sports, and international affairs, AzadNews24.com ensures accurate, timely, and engaging content for a diverse audience. With a strong commitment to journalistic integrity, the platform keeps its viewers informed 24/7 with real-time news and in-depth reports from across the country and around the world. Whether it’s breaking news or exclusive features, is your reliable source for staying updated.

সম্পাদক

শামীম আজাদ

স্বত্ব © ২০২৫ আজাদ নিউজ ২৪

অনুসরণ করুন