বিক্রি হওয়ার পথে বিখ্যাত মারকানা স্টেডিয়াম

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য নাম মারাকানা স্টেডিয়াম— ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের “মারাকানাজো” থেকে শুরু করে ব্রাজিলের অসংখ্য গৌরবগাথার সাক্ষী এই ঐতিহাসিক মাঠ। কিন্তু সাত দশকেরও বেশি সময় রিও দে জেনেইরো রাজ্য সরকারের মালিকানায় থাকা এই স্টেডিয়াম এখন বিক্রির পথে। সরকারি ব্যয় সংকোচন ও আর্থিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার স্টেডিয়ামটি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে।

সম্প্রতি রিও রাজ্য সরকার এমন একটি বিল উত্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে সরকারি সম্পদ বিক্রির সুযোগ তৈরি হবে। সেই তালিকায় নাম এসেছে মারাকানা স্টেডিয়ামেরও।

রাজ্যের সংবিধান ও বিচার কমিশনের সভাপতি রদ্রিগো আমোরিম জানান, “স্টেডিয়ামটির রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল ব্যয় হয়—প্রতি ম্যাচে গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ইউরো খরচ পড়ে সরকারের।”

১৯৫০ সালের ১৬ জুন উদ্বোধনের পর থেকেই স্টেডিয়ামটি রিও রাজ্য সরকারের অধীনে ছিল। নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্বই পালন করেছে সরকার।

তবে বর্তমান গভর্নর ক্লাউদিও কাস্ত্রো (লিবারেল পার্টি) “কমপ্লিমেন্টারি বিল ৪০/২০২৫”-এর আওতায় রাজ্যের ৩০টি সরকারি সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন—যার মধ্যে অন্যতম মারাকানা। সরকার আশা করছে, এসব বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৩২০ মিলিয়ন ইউরো আয় হতে পারে। তবে আমোরিমের দাবি, “এটি শুধু রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং অব্যবহৃত সম্পত্তিগুলোর পুনরুজ্জীবন ও অপ্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় রোধের পদক্ষেপ।”

তবে অর্থনৈতিক এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বড় সংকট। রিও দে জেনেইরো রাজ্য বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রায় ১.৮৯ বিলিয়ন ইউরো ঋণে জর্জরিত, যা ২০২৬ সালের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে।

অন্যদিকে, স্টেডিয়াম বিক্রিতে রয়েছে আইনি জটিলতাও। বর্তমানে ফ্ল্যামেঙ্গো ও ফ্লুমিনেন্সের যৌথ কনসোর্টিয়াম ২০৪৪ সাল পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি পরিচালনা করছে। তারা জানিয়েছে, চুক্তির পূর্ণ মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অধিকার ত্যাগ করবে না।

এদিকে, ফ্ল্যামেঙ্গো ঘোষণা দিয়েছে নিজেদের নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা। রিওর গ্যাসোলগ এলাকায় নির্মিতব্য এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ৮০ হাজার দর্শক, যা উচ্চতায় ছাড়িয়ে যাবে রিয়াল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকেও।

উল্লেখ্য, এটি মারাকানা বিক্রির প্রথম চেষ্টা নয়। ২০১১ সালেও ধনকুবের আইকে বাতিস্তা ২০১৪ বিশ্বকাপ ও ২০১৬ অলিম্পিকের আগে স্টেডিয়ামটি কিনতে চেয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

৭৫ বছরের ঐতিহ্য বহন করা মারাকানা স্টেডিয়াম বিক্রির এই প্রস্তাব এখন রিও দে জেনেইরোর রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফুটবলপ্রেমীদের প্রশ্ন একটাই—ব্রাজিলের ফুটবল আত্মার প্রতীক কি তবে বেসরকারি মালিকানায় হারাবে তার ঐতিহাসিক মর্যাদা?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর