গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ক্যান্টনমেন্টের বিশেষ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাদের প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশ দেবেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রোববার নির্ধারিত শুনানির দিনে যেসব আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তাদের সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।
এক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলের গোপন স্থানে আটক রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে। অন্য মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা ‘আয়নাঘর’ থেকে গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
গত ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
টিএফআই সেলে নির্যাতনের অভিযোগে আসামি ১৭ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন— ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসানসহ অন্য কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে ১০ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
জেআইসি বা ‘আয়নাঘর’ গুমের অভিযোগে অপর মামলার ১৩ আসামির তালিকায়ও শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম রয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী এবং লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
এ মামলায় তিনজন কারাগারে থাকলেও বাকিরা পলাতক বলে জানা গেছে। আজকের শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দিতে পারে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।









