চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। আগামী বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বন্দরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ—আগ্রাবাদ, বড়পোল ও মাইলের মাথায় সর্বাত্মক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবরোধ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বন্দর রক্ষা ও শ্রমিক অধিকার আদায়ে স্কপের ৯ দফা দাবির পক্ষে সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত স্কপের শ্রমিক কনভেনশন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কনভেনশনে বক্তব্য রেখে নুরুল্লাহ বাহার অভিযোগ করেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নিয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সরকার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ২৫–২৭ নভেম্বর ঢাকায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তির কার্যক্রম এগোনো যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। স্কপ, বন্দর রক্ষা কমিটি, বাম রাজনৈতিক দলসহ সবাই বন্দর সুরক্ষায় আন্দোলনে রয়েছে।”
কনভেনশনে আরও বক্তব্য দেন স্কপ নেতৃবৃন্দ—আব্দুল কাদের হাওলাদার, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, তপন দত্ত, আহসান হাবিব বুলবুল, এ এ এম ফয়েজ হোসেন এবং মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইজারা দেওয়া, পাটকল বন্ধ, সরকারি কলকারখানা বিক্রি—এসব বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় ব্যবসায়ীদেরও আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে ২৬ নভেম্বরের অবরোধের পর ঢাকায় শ্রমিক-ব্যবসায়ী যৌথ বৈঠকেরও প্রস্তাব দেন।
কনভেনশনে স্কপের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—শ্রমিক সংগঠনে পূর্ণ স্বাধীনতা, অভিন্ন শ্রম আইন বাস্তবায়ন, অন্যায্য ছাঁটাই-হয়রানি বন্ধ, ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ, মহার্ঘ ভাতা চালু, রেশনিং ও আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পেনশন চালু, নারীদের ডরমিটরি, হাসপাতাল সুবিধা এবং বেকার ভাতা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি করে সরকার, যা আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। একই দিনে কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২২ বছরের চুক্তিও সম্পন্ন হয়।









