ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন বরিশালের এক যুবককে। তোফাজ্জেল নামের ঐ যুবকের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করেন হলের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, মূলত মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে ঘটে এ ঘটনা। দুপুরে হলের মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা চলাকালীন ৬টি মোবাইল চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে খেলা চলাকালীন ৮টার দিকে তোফাজ্জল হলে ঢুকলে তাঁকে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা, তোফাজ্জলই মোবাইল চুরি করছে। তাকে গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মারধর করেন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। পরবর্তীতে তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আবারো গেস্টরুম নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
হলের আবাসিক শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল দল ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বারবার অনুরোধ করলেও তোফাজ্জলকে ছাড়েনি অভিযুক্তরা। এমনকি সে মানসিক ভারসাম্যহীন জানার পরেও তাঁকে ছেড়ে দিয়ে অস্বীকৃতি জানায় শিক্ষার্থীরা।
চোর সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ফজলুল হক হলের ভেতরে ধরে আনার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ ও নিজেদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষার্থী আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভও করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দুঃখপ্রকাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর বলে জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়৷ জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সংঘটিত অমানবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুঃখিত ও মর্মাহত। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে৷ প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি জানার পরই ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে৷ সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ছয় ছাত্র আটক
চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া উইং থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন জালাল মিয়া, মোহাম্মদ সুমন, মোত্তাকিন সাকিন, আল হোসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। তাঁরা সবাই এফ এইচ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয় হন।