যেসব সাংবাদিক মবের ভয়ে আছেন, তারা ফ্যাসিবাদের দোসর : প্রেস সচিব

ষ্টাফ রিপোর্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘যেসব সাংবাদিক মবের ভয়ে আছেন, তারা আসলে ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন। এ সরকার কাউকে ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে হয়রানি করছে না।’

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শফিকুল আলম দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সাংবাদিকরা তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিকদের ওপর ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নানা ধরনের নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে তারা কাজ করতেন। এখন আমরা সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছি।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকে বলেন মবের ভয়ে আছেন, কিন্তু আমি কোথাও সেই ভয় দেখি না। যিনি ভয় পাচ্ছেন, তিনি হয়তো অতীতে দোসর ছিলেন। আমরা কোনো গণমাধ্যমে আক্রমণ সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।”

প্রেস সচিব জানান, গত ১৫ মাসে সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছে। তবে রাজনৈতিক সরকার এলে সেই নিরাপত্তা টিকে থাকবে কি না—এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “সেন্টমার্টিন দখল হচ্ছে—এমন ভুয়া খবরসহ হাজারো গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়। সরকারের জন্য সামাজিক মাধ্যম এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সক্ষমতা সীমিত—ফলে এসব ফেক নিউজ প্রতিহত করতে কার্যকর টুলের প্রয়োজন।”

তার মতে, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, “মিডিয়া হাউসগুলো এখন একধরনের ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তারা সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি ভেটো ক্ষমতার মতো আচরণ করছে। বড় ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন মিডিয়া খুলছেন। সাংবাদিক সংগঠন থাকতে পারে, তবে সেটি অবশ্যই দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরি।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, “গণমাধ্যমের ইকোসিস্টেম সাংবাদিকদের জন্য দিন দিন ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। খুব কম বেতনে সাংবাদিক নিয়োগ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর অনেক মিডিয়ার মালিকানা ও নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে—দলীয় ঘনিষ্ঠরা এখন সেই জায়গায় বসেছেন।”

তিনি গণমাধ্যমে ক্রস ওনারশিপ (এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম) বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের ইশতেহারে থাকবে—এক মালিক, এক গণমাধ্যম নীতি।”

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “গণমাধ্যমে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। শেখ হাসিনা আমলের একই কাঠামো এখনো চলছে। এর মধ্যেই দুটো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।”

তিনি সাবেক উপদেষ্টাদের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, “যারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ ছিলেন, তারা যদি তাদের মন্ত্রণালয়ে সংস্কার আনতে পারতেন, তাহলে তারা উদাহরণ হয়ে উঠতেন। কিন্তু তারা পারেননি।”

ফটোকার্ড সংস্কৃতির সমালোচনা করে রাশেদ খান বলেন, “আমি দশ মিনিট কথা বলি, কিন্তু কেউ তার মধ্যে থেকে দুই লাইন কেটে ফটোকার্ড বানিয়ে ফেসবুকে দেয়। এতে বিকৃত বার্তা ছড়ায়, কখনো নেতাদের চরিত্রহননও হয়। ফটোকার্ড পুরোপুরি বন্ধ করতে বলছি না, তবে এর অপব্যবহার রোধে নীতিমালা করা জরুরি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *