লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবি: নিহত ১৮, বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ৯০

লিড নিউজ বিডি ডেস্ক

লিবিয়ার উপকূলে ইউরোপগামী একটি অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশিসহ অন্তত ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উপকূলীয় শহর সাবরাথার কাছে সোমবার রাতে নৌকাটি দুর্ঘটনায় পড়ে। খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধার দল রাতেই অভিযান শুরু করে এবং মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। পরে মরদেহগুলো সুরমান বন্দরের কাছাকাছি উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়।

রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবীরা মরদেহগুলো সাদা ব্যাগে মুড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেছে সংস্থাটির কর্মীরা।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, লিবিয়ার আল জাওইয়া অঞ্চল থেকে যাত্রা করা কাঠের নৌকাটি সমুদ্রে ভাসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রবল ঢেউয়ে উল্টে যায়। এতে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়।

রেড ক্রিসেন্টের হিসেবে জীবিত উদ্ধার হয়েছে ৯০ জন, তবে আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার করা হয়েছে ৬৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে—যাদের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি, ৩১ জন সুদানি (এক নারী ও এক শিশু), ১২ জন পাকিস্তানি এবং ৩ জন সোমালি নাগরিক রয়েছেন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জাতীয়তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে আইওএম। সংস্থাটি বলেছে, “এই নৌকাডুবি আবারও মনে করিয়ে দেয়, নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় পা রাখা মানুষেরা কতটা ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে থাকেন।”

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে লিবিয়ার পশ্চিম উপকূলে তিউনিশিয়া সীমান্তের কাছে দুই সপ্তাহে অন্তত ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

আইওএমের “মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট” অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে এক হাজার ৪৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ বা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫২৭ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ার উপকূলে।

আইওএম জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে তারা স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। সংস্থাটি ভূমধ্যসাগরে প্রাণহানি ঠেকাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই লিবিয়া অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। দেশটি এখনও ত্রিপোলি ও বেনগাজিকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত। এই অস্থিতিশীলতার সুযোগে মানবপাচার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা আফ্রিকা ও এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের ইউরোপগামী বিপজ্জনক যাত্রায় প্রলুব্ধ করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *