জাতিসংঘ হঠাৎই বাংলাদেশ পুলিশের একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টের মিশন বাতিল করেছে। মাত্র এক মাস ২০ দিন আগে কঙ্গোতে যোগ দেওয়া ১৮০ সদস্যের এই পুরো দলকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে কঙ্গোতে বাংলাদেশের পুলিশ মিশনকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৮০ সদস্যের এ দলের মধ্যে ৭০ জন নারী ছিলেন, যা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে একমাত্র নারী কন্টিনজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। এই ইউনিটের মিশন আগামী বছরের আগস্টে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বৈশ্বিক তহবিল সংকটের কারণে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের কন্টিনজেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সদস্য কমানো হলেও, বাংলাদেশের পুরো দলকেই প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা ধারণা করেছিলাম, সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কমানো হবে। কিন্তু পুরো ইউনিট বাতিল হওয়াটা অপ্রত্যাশিত।”
কঙ্গোতে দায়িত্ব পালনরত এক কর্মকর্তা বলেন, “একই মিশনে ভারত, সেনেগাল ও মিশরের কন্টিনজেন্ট টিকে গেছে। তাদের কূটনৈতিক যোগাযোগ শক্তিশালী হওয়ায় তারা প্রত্যাহারের মুখে পড়েনি। কেবল বাংলাদেশই পুরোপুরি বাদ পড়েছে।”
জাতিসংঘের একটি নথি অনুযায়ী, কঙ্গো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানের পুলিশ ইউনিট থেকে ১৭–২৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে কঙ্গোতে বাংলাদেশ পুলিশের ১৮০ সদস্যের পুরো দলকেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের এই মিশন রক্ষায় আরও সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি ছিল। এখনো সুযোগ থাকলে তা কাজে লাগানো উচিত।”
তবে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, মিশন রক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশের একটি দল কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশনের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। মিশনপ্রধান জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সুযোগ এলে বাংলাদেশ দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, “জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। কস্ট কাটিংয়ের কারণে বাহিনী কমানো হয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই, পরবর্তী সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সাল থেকে এফপিইউ (ফরমড পুলিশ ইউনিট) এবং ২০১১ সাল থেকে নারী কন্টিনজেন্ট কঙ্গোতে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৮১৬ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে ২৪ জন বীর সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কিছু ইন্ডিভিজুয়াল পুলিশ অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।









