মালয়েশিয়ায় ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা: এইচআরডব্লিউ

ষ্টাফ রিপোর্টার

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক ও পদ্ধতিগত শ্রম নিপীড়ন চলছে—এমন কঠোর অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতারণা, শোষণ, অতিরিক্ত নিয়োগ ফি এবং ঋণশৃঙ্খলে পড়ে থাকা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পরিস্থিতি বর্তমানে ‘গভীর মানবাধিকার সংকট’-এ রূপ নিয়েছে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বৈধ ওয়ার্ক পারমিটধারী বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বর্তমানে ৮ লাখের বেশি, যা দেশটির সবচেয়ে বড় বিদেশি শ্রমিকগোষ্ঠী। কিন্তু জাতিসংঘের তথ্যে দেখা গেছে—হাজারও শ্রমিক বাংলাদেশেই আটকে রয়েছেন, কিংবা মালয়েশিয়ায় এসে প্রতারণা ও শোষণের শিকার হয়েছেন। অনেক শ্রমিককে সরকারি অনুমোদিত ফির পাঁচগুণ পর্যন্ত অর্থ দিতে বাধ্য হতে হয়েছে।

জাতিসংঘ জানায়, নিয়োগকারীদের হাতে পাসপোর্ট জব্দ, মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতি, চুক্তির সঙ্গে বাস্তব সুবিধার অসামঞ্জস্য, এবং সরকারি সংস্থাগুলোর পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব—এসব হয়রানি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যেসব শ্রমিকের সঠিক নথিপত্র নেই, তারা গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন ও দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকেন। কঠোর ইমিগ্রেশন আইনের কারণে মালয়েশিয়ায় নিয়মিত রেইড পরিচালনা করা হয়, এবং বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার অভিবাসী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে রয়েছেন।

এর আগে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ার বেশ কিছু কারখানা থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জোরপূর্বক শ্রম নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২৭ সালে কার্যকর হতে যাচ্ছে, যার ফলে জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি যেকোনো পণ্যের বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। শ্রমিকদের ঋণশৃঙ্খল, প্রতারণা ও শোষণের ঘটনা এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় পণ্য নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে বলেছেন—ঘটনাগুলো তদন্তে দুই দেশকেই অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে, এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। তারা আরও সতর্ক করেছেন যে, জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ক্রেতা কোম্পানিগুলোর প্রতি ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে নিয়োগ ব্যয় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয় এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।

প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়েছে, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশকেই দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের মতো ক্রেতা–দেশগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে—তাদের বাজারে এমন কোনো পণ্য স্থান না পায়, যা মাসের পর মাস ভোগান্তিতে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের ফলাফল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর