ভারতের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ, মাসে ২৪৫০০ রুপি

আমি কখনো ভাবিনি যে একদিন বিদেশে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পাব। ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতাম, বিদেশে পড়তে গেলে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখা থামাইনি, পরিশ্রম করে গেছি, যার ফলস্বরূপ আসিসিআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলশনস) ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছি। এই যাত্রাটা সহজ ছিল না। কিন্তু আমি যদি পারি, আপনিও পারবেন। আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাই আমার গল্পটাই আজ আপনাদের বলছি।

স্বপ্ন দেখা ও শুরুটা কেমন ছিল? আমি পড়াশোনায় খুব বেশি মনোযোগী ছিলাম না, কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া আমার জন্য কেবল একটা দূরবর্তী স্বপ্ন ছিল। আমার বন্ধু রিমন প্রথমে ভারতে আইসিসিআর স্কলারশিপ সম্পর্কে জানায়। পরে জানতে পারি আইসিসিআর স্কলারশিপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০০ শিক্ষার্থীকে বিনা খরচে ভারতে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তখনই মনে হলো, এটাই আমার সুযোগ! আমি দ্রুত আইসিসিআরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখি, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করা যাবে, প্রতি মাসে ১৮,০০০ রুপি স্টাইপেন্ড পাওয়া যাবে, সঙ্গে বাসাভাড়া ৬,৫০০ রুপি এমনকি বিমান ভাড়াও ভারত সরকার বহন করবে। আমি দেরি না করে তৎক্ষণাৎ বন্ধু রিমনের সঙ্গে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই।

এখন আসি মূল কথায়, আইসিসিআর স্কলারশিপের আবেদন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন।

সুযোগ–সুবিধাগুলো—

১.

সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পড়াশোনার সুযোগ ফুল টিউশন ফি কভার করবে ভারত সরকার। এককালীন বিমান ভাড়া বহন করা হবে (প্রথমবার ভারত যাওয়ার সময় এবং ডিগ্রি শেষে দেশে ফেরার সময়)।

২.

স্টাইপেন্ড: মাসিক স্টাইপেন্ড (ভাতা) মিলবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ১৮,০০০ রুপি (মাসে), মাস্টার্সে: ২০,০০০ রুপি (মাসে), পিএইচডি: ২২,০০০ রুপি (মাসে)।

৩.

বাড়ি ভাড়া সহায়তা: সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ৬,৫০০ রুপি

৪.

মেডিকেল সুবিধা: ভারত সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা

৫.

গবেষণা ও একাডেমিক সুবিধা: অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি লাইব্রেরি ও গবেষণা সুযোগ দেয়। কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ।

কীভাবে আবেদন করবেন—

*আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক

*ইয়ার গ্যাপ: এ স্কলারশিপের জন্য ইয়ার গ্যাপ কোনো বাধা নয়, তবে একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হলে সুযোগ বাড়বে

১.

অনলাইনে ফরম পূরণ করুন: আইসিসিআর–এর অফিশিয়াল পোর্টালে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পছন্দের ছয়টি বিষয় বাছাই করতে হবে। ৫০০ শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে।

২.

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন: এসএসসি ও এইচএসসির মার্কশিট ও সার্টিফিকেট পাসপোর্টের স্ক্যান কপি ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (TOEFL/IELTS থাকলে) সুপারিশপত্র এবং ফিজিক্যাল ফিটনেসবিষয়ক সার্টিফিকেট।

৩.

লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা: লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি গ্রামার ও বিভিন্ন প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষায় ভলো করলে এরপর ভারতীয় হাইকমিশনে ভাইভা দিতে হবে।

আমি যেভাবে আবেদন ও প্রস্তুতি নিয়েছি—

*প্রথমে আমি আসিসিআর-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করি

*এসএসসি ও এইচএসসিতে ৬০ শতাংশের বেশি মার্কস থাকায় আমি আবেদন করার যোগ্য ছিলাম

*পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক ছিল, তাই আগেই তা সংগ্রহ করে ফেলেছিলাম

*প্রবন্ধ লেখা: আমাকে ৫০০ শব্দের ইংরেজি প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়েছিল। আমি নিজের গল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কেন ভারতে পড়তে চাই—এসব সুন্দরভাবে লিখে জমা দিই।

*TOEFL বা IELTS বাধ্যতামূলক ছিল না, তবে ইংরেজিতে দক্ষতা দেখানোর জন্য আমি নিজের প্রস্তুতি আরও ভালোভাবে নিয়েছিলাম।

আমার আবেদনের কিছুদিন পর ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পাই। লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা পরীক্ষায় ইংরেজি গ্রামার ও সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন ছিল। আমি মোটামুটি ভালোই পারফর্ম করলাম। এরপর ভাইভার জন্য ডাক এল।

এটি ছিল আমার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ। ভাইভায় আমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হয়—

তুমি কেন এই স্কলারশিপ চাও?

ভারতে পড়ার পর কী করবে?

তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

কো–কারিকুলার একটিভিটিস বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিলাম। বুঝতে পারলাম, স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য শুধু একাডেমিক রেজাল্ট ভালো থাকলেই হয় না বরং আত্মবিশ্বাস, যোগাযোগ দক্ষতা ও স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও থাকা দরকার।

অফার লেটার ও ভিসা প্রক্রিয়া—

ভাইভা শেষে আমি ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকে অফার লেটার পেলাম! এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলোর একটি। এরপর আমি ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করি, যা খুব সহজেই পেয়ে যাই। এরপর প্রস্তুতি নিতে শুরু করি ভারতে নতুন জীবনের জন্য। ভারতে যাত্রা ও নতুন জীবন আমি ৩০,০০০ টাকা সঙ্গে নিয়ে ভারতে যাত্রা করি, কারণ প্রথম মাসের স্টাইপেন্ড পেতে কিছুটা সময় লাগবে। ভারতে পৌঁছে আমাকে প্রথমেই—সিম কার্ড কিনতে হয় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। আসিসিআর অফিসে রিপোর্ট করতে হয়, যাতে তারা আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কলারশিপ প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সুযোগ পাই, যা আমাকে আরেকটি চিন্তামুক্ত করেছিল। এরপর শুরু হলো আমার নতুন একাডেমিক জীবন, নতুন দেশ, নতুন মানুষ, নতুন সংস্কৃতি।

বিদেশে পড়ার অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আমি শুধু পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ থাকিনি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। প্রায় ১০টা আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া, আমি আমার নিজস্ব সংগঠন ‘হাসিব গ্রন্থাদি’ নিয়ে কাজ করছি, যেখানে বিদেশিদের বাংলা ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ১৩টি দেশের ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বাংলা শেখানোর সুযোগ পেয়েছি এটি আমার জন্য এক বিশেষ অর্জন।

আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ—

কীভাবে এই স্কলারশিপ পাবেন? আপনার যদি সত্যিই বিদেশে পড়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আসিসিআর স্কলারশিপ হতে পারে আপনার জন্য সেরা সুযোগ। আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছি—

আগেভাগে আবেদন করুন: দেরি করলে সুযোগ হারানোর সম্ভাবনা থাকে;

পাসপোর্ট তৈরি রাখুন: এটি বাধ্যতামূলক;

ভালো একটি প্রবন্ধ লিখুন: নিজের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুন্দরভাবে তুলে ধরুন;

লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিন;

আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর

AzadNews24.com is a trusted online news portal in Bangladesh, dedicated to delivering the latest news and special updates to its valued readers. Covering a wide range of topics including politics, economy, education, entertainment, sports, and international affairs, AzadNews24.com ensures accurate, timely, and engaging content for a diverse audience. With a strong commitment to journalistic integrity, the platform keeps its viewers informed 24/7 with real-time news and in-depth reports from across the country and around the world. Whether it’s breaking news or exclusive features, is your reliable source for staying updated.

সম্পাদক

শামীম আজাদ

স্বত্ব © ২০২৫ আজাদ নিউজ ২৪

অনুসরণ করুন