বাংলাদেশ গত ১৬ বছর ধরে যেন এক অদৃশ্য অন্ধকারের নিচে চাপা পড়ে ছিল—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তারেক রহমান লিখেছেন, গত ১৬ বছরে অনেকেই এই অন্ধকারকে গভীরভাবে অনুভব করেছেন, আবার কেউ নীরবে সহ্য করে গেছেন। তবে যারা পতিত সরকারের বিরোধী অবস্থানে ছিলেন, তাদের জন্য এ সময় ছিল ভয়, নির্যাতন ও দমন-পীড়নের নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর ঘরে না ফেরা অসংখ্য পরিবারের অপেক্ষার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও মিথ্যা মামলার সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে বিএনপি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। তবে অত্যাচার শুধু বিএনপির ওপর ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী—সকল শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল হুমকির মুখে।
পোস্টে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ২০১৫ সাল থেকে তাকে কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। দেশের কোনো গণমাধ্যমে তার বক্তব্য প্রচার না করার নির্দেশনা ছিল বলে দাবি করেন তিনি। তবুও গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম থামাননি বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “সত্যের স্পিরিটকে নির্দেশ দিয়ে থামানো যায় না।”
এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক’ উল্লেখ করে বলেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস ও রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি।
তারেক রহমান বলেন, তার পরিবারও এই দুঃসহ সময়ের ভুক্তভোগী। এক ছেলের মৃত্যু, অন্য ছেলের ওপর নির্যাতন—এসব সহ্য করতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। কিন্তু ইতিহাস বলে, কষ্ট অনেকসময় মানুষকে মহান করে তোলে। “আমার মা প্রমাণ করেছেন—যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে।”
দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি লেখেন, আজ প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ—যেখানে মানবাধিকার সবার জন্য নিশ্চিত থাকবে; যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং বিরোধী মত গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হবে, হুমকি নয়। ভিন্নমতের কারণে কাউকে আর নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হওয়ার ভয়ে বাঁচতে হবে না—এ প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি।
পোস্টে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, দলটি প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে। “কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না—তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।”
১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষিতে আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি সহ বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কথা স্মরণ করেন তিনি—যাতে ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি আর ফিরে না আসে।
তারেক রহমান পোস্টটি শেষ করেন এ বলে যে, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সয়েছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি; বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, আইনের শাসন ও পুনর্মিলনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকারই হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।”









