দীর্ঘ সংঘাতের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, দুই পক্ষ সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি বন্দিবিনিময়েও রাজি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। অপরদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ইসরায়েলি নাগরিকরা।
টানা দুই বছর ধরে ভয়াবহ হামলায় বিপর্যস্ত গাজাবাসী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে। আনন্দে ও স্বস্তিতে তারা ফেরার পথে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিচ্ছে, কেউবা উল্লাসে শিস বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে।
খান ইউনিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই মধ্য গাজার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলগুলো থেকে হাজারো ফিলিস্তিনি গাজা সিটির দিকে দলবেঁধে রওনা হয়েছেন।
বাস্তুচ্যুত ইব্রাহিম আল-হেলু (৪০) বলেন, “আমরা আবেগে ভেসে যাচ্ছি, তবে সতর্কও আছি। পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত। তবে এখন আর কোনো বাধা নেই, তাই আমরা আমাদের বাড়ির খোঁজ নিতে গাজা সিটিতে ফিরছি।”
এ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বুধবার (৮ অক্টোবর) মিশরের পর্যটন নগরী শারম আল-শেখে হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষভাবে সমঝোতায় পৌঁছায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থাপিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে এই আলোচনা চলে, যেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিশর ও তুরস্ক ভূমিকা রাখে।
বুধবার রাতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস—দু’পক্ষই চুক্তিতে সই করেছে। এর ফলে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি টেকসই ও স্থায়ী শান্তির পথে প্রথম ধাপ।”
হামাসও চুক্তিতে সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই চুক্তি গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাবে, সেনা প্রত্যাহার ও ত্রাণ প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করবে এবং বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া শুরু করবে।
হামাসের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হায়া বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে—এই যুদ্ধের অবসান ঘটেছে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র দুই মাসের কিছু সময় যুদ্ধবিরতি ছিল; বাকিটা সময় গাজায় চলেছে অবিরাম রক্তপাত।









