মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যেন এক অবিশ্বাস্য ক্রিকেট নাটক মঞ্চস্থ হলো। শেষ বল পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচে জয় প্রায় ছুঁয়ে ফেলেও বাংলাদেশকে থামতে হলো হতাশার এক ধাপে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ম্যাচ টাই হওয়ার পর সুপার ওভারে মাত্র ১ রানের ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পরাজিত হয়েছে টাইগাররা।
এ ছিল যেন এক ক্লাসিক “ক্রিকেট থ্রিলার”—উত্থান-পতন, ভুল-সাফল্য, সুযোগ ও মিসে ভরা পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক। গ্যালারির দর্শক থেকে শুরু করে ডাগআউট—সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছিল শেষ বলের জন্য, কিন্তু ভাগ্য এবার হাসল না বাংলাদেশের পক্ষে।
টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ওপেনার সাইফ হাসান ১৬ বলে ৬ রান করে আউট হন। অপর প্রান্তে সৌম্য সরকার কিছুটা ধৈর্য ধরে লড়লেও সহযোগিতা পাননি অন্যদের কাছ থেকে। তাওহিদ হৃদয় (১২), শান্ত (১৫) ও অঙ্কন (১৭)—সবাই শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন।
এক প্রান্ত আগলে সৌম্য সরকার ধীরে ধীরে গতি তোলেন, কিন্তু ৮৯ বলে ৪৫ রানে ফেরেন সাজঘরে। এরপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংসকে ধরে রাখেন (৫৮ বলে ৩২*)। শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ১৪ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস বাংলাদেশকে নিয়ে যায় ২১৩ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গুডাকেশ মোতি ৩টি এবং আকিল হোসেইন ও আলিক আথানাজে ২টি করে উইকেট নেন।
জবাবে শুরুতেই বাংলাদেশ আঘাত হানে। নাসুম আহমেদের স্পিনে শূন্য রানে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। এরপর আথানাজে (২৮) ও কেসি কার্টি (৩৫) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও রিশাদের ঘূর্ণিতে আবারও ধস নামে। ৯০ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
তানভীর ইসলামের স্পিনে আরও বিপর্যয় ঘটে, ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারালে মনে হচ্ছিল, এখানেই শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু অধিনায়ক শাই হোপের অনবদ্য ইনিংস বদলে দেয় চিত্র। জাস্টিন গ্রেভসকে সঙ্গে নিয়ে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন দুজন।
শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ২৫ রান। মিরাজের ওভারে আসে ১১, মুস্তাফিজ দেন ৯ রান। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৫ রানে। বোলিংয়ে আসেন সাইফ হাসান। প্রথম দুই বল ডট, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আসে দুটি সিঙ্গেল। পঞ্চম বলে আকিল বোল্ড—শেষ বলে দরকার ৩ রান। পিয়েরের ক্যাচ মিস করেন সোহান, তাতেই টাই হয়ে যায় ম্যাচ!
সুপার ওভারে আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ১০ রান (হোপ-রাদারফোর্ড)। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ১১। প্রথম বলেই ওয়াইড ও নো-বল মিলিয়ে ৫ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ, কিন্তু এরপরই ব্যাটিংয়ে ধস। সাইফ ও সৌম্যর ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ১০ রানই আসে—১ রানের নাটকীয় পরাজয়।
মিরপুরের গ্যালারি স্তব্ধ, খেলোয়াড়দের মুখে হতাশা। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নির্ধারণী ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২৩ অক্টোবর, একই ভেন্যুতে।
সেই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে—বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের হাসি হাসবে, নাকি ক্যারিবীয়রা ফিরিয়ে নেবে গৌরব।









