১২ লাখ টাকায় খুন করা হয় সালমান শাহকে!

ষ্টাফ রিপোর্টার

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যু ছিল এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, আত্মহত্যা নয়— এমনই লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মামলার ১১ নম্বর আসামি রেজভি আহমেদ ফরহাদ। ১৯৯৭ সালে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে উঠে আসে সেই নারকীয় রাতের বিস্তারিত বর্ণনা।

প্রায় তিন দশক পর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। এতে নতুন করে আলোচনায় আসে রেজভির ১৯৯৭ সালের সেই জবানবন্দি, যেখানে তিনি বলেন— “আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেকে জড়িত ছিলেন। আমিও ছিলাম সেই পরিকল্পনার অংশ।”

রেজভির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহকে হত্যার জন্য ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়, যা করেন সালমানের শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। সেই চুক্তিতে অংশ নেন সিনেমার খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাভেদ।

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে বসে এই হত্যার পরিকল্পনা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ, রেজভি, ছাত্তার ও সাজু। ফারুক জানান, “সামিরার মা আগাম ৬ লাখ টাকা দেবেন, কাজ শেষ হলে বাকি ৬ লাখ।” এরপর প্লাস্টিকের দড়ি, সিরিঞ্জ ও রিভলভারসহ হত্যার সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হয়।

রেজভির বর্ণনায়, সেই রাত আড়াইটায় ডন, ডেভিড, ফারুক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ঢাকায় সালমান শাহর বাসায় যান। সালমানের স্ত্রী সামিরা, তার মা লুসি ও আত্মীয়া রুবি তখন বাড়িতেই ছিলেন। সালমান ঘুমিয়ে ছিলেন— তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে বেহুঁশ করা হয়। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। আজিজ ভাই সালমানকে ইনজেকশন পুশ করার নির্দেশ দেন, যার পরই সালমান শাহ মারা যান। এরপর তাকে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, মাত্র ২৫ বছর বয়সে, রহস্যজনকভাবে মারা যান ঢালিউড কিংবদন্তি সালমান শাহ। দীর্ঘ ২৯ বছর তদন্ত চললেও মৃত্যুর রহস্যের কোনো সঠিক সমাধান মেলেনি— বারবার একে “অপমৃত্যু” বলা হয়েছে। কিন্তু এখন মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তাধীন।

বর্তমান হত্যা মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য আসামিরা হলেন— প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, সালমানের সাবেক শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রেজভি আহমেদ ফরহাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর